মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন
কলাপাড়া প্রতিনিধি॥ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালীর কলাপাড়া। এখানকার ৩৭ শতাংশ মানুষের জীবিকা মৎস্য সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। এ উপজেলার পেশাদার জেলেদের আহরিত মৎস্য সম্পদ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেও বড় ভূমিকা পালন করে।
গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক জেলে, নিখোঁজের সংখ্যাও ছোট নয়। প্রজনন মৌসুমে নদী, সমুদ্রে মাছ ধরা নিষেধ থাকে। ওই সময় জেলেদের সরকারিভাবে তালিকা করে বিশেষ প্রণোদনার (ভিজিএফ) আওতায় আনলেও হালনাগাদের ফাঁদে পড়ে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন কলাপাড়া উপজেলার পেশাদার জেলেরা।
গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ। এ মৌসুমে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা না পেয়ে অনেক জেলের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েও সরকার প্রদত্ত সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না তারা। খাদ্য সংকটের কারণে পরিবার নিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
দরিদ্র জেলেদের অভিযোগ, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের তালিকাভুক্ত জেলেদের ভিজিএফ-এর আওতায় খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করেছে সরকার। তবে হালনাগাদের ফাঁদে পড়ে সুবিধাবঞ্চিত হয়েছেন অনেকেই। এরই মধ্যে পেশা পরিবর্তন করেছেন কমপক্ষে ৫০ শতাংশ জেলে। অনেকেই জড়িয়ে পড়েছেন অপরাধে।
কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের ষাটোর্ধ্ব আবদুর রহিম বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে এ পেশায় খেটে খাচ্ছি। বর্তমানে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছি। ভিজিএফ-এর তালিকায় নাম থাকলেও চাল পাইনি। এখন চাল পায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক, দোকানদারসহ অন্যান্য পেশার মানুষ।
ইলিশ শিকারী সাইদ হাওলাদার বলেন, বাপ-দাদাসহ আমার কয়েক পুরুষ এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। আমিও কার্ডধারী জেলে। কিন্তু ভিজিএফ-এর তালিকায় নাম না থাকায় খাদ্য সহায়তা পাইনি। আমাদের চাল দেয়া হয় অন্যান্য পেশার মানুষদের।
একই অভিযোগ ধুলাসার ও লচাপলী ইউনিয়নের শতাধিক জেলের। জানতে চাইলে লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বলেন, আমার ইউনিয়নে ২৭শ’ জেলে আছেন। তবে তালিকায় আছে মাত্র ১৪৫০ জনের নাম। তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় প্রায় অর্ধেক পেশাদার জেলে তাদের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুত তালিকা হালনাগাদ করে জেলেদের সরকারি সুবিধার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অনুপ সাহা বলেন, ২০১৯ সালে হালনাগাদ তালিকার প্রণীত নীতিমালা করোনা পরিস্থিতির কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। করোনার পরিস্থিতি স্বাভবিক হলে দ্রুতই প্রতিটি ইউনিয়নে তালিকা হালনাগাদ ও নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, কলাপাড়া উপজেলায় কার্ডধারী জেলে ১৮ হাজার ৫০৮ জন। তাদের মধ্যে ভিজিএফ সুবিধাভোগী ১০ হাজার ৫৯৩ জন। প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা উদ্যোগ নিলে সব জেলেকে এ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব।
Leave a Reply